Header Ads

কম বয়সে ডায়াবিটিস চল্লিশের পরে নয়।

চল্লিশের পরে নয়। কুড়ির কোঠাতেও হতে পারে টাইপ টু ডায়াবিটিস। আর ডায়াবিটিস নিয়ন্ত্রণে অনেকটাই ভূমিকা আছে সঠিক জীবনযাত্রার। জানাচ্ছেন ডা. সুজয় রায়চৌধুরী। 




এতদিন তো জানতেন যে ডায়াবিটিস বয়স্ক বা মাঝবয়সীদের অসুখ। কিন্তু স্ট্রেস-টেনশন-ফাস্টফুডের যুগে কী আর ডায়াবিটিস এতটা ধৈর্য নিয়ে অপেক্ষা করতে পারে! অতএব, কুড়ির আগেই ছেলেমেয়েদের মধ্যে দেখা দিচ্ছে টাইপ টু ডায়াবিটিস। কম বয়সে ধরা পড়ায়, প্রায় সারাজীবনই বয়ে বেড়াতে হতে পারে এই অসুখ। তবে আগেভাগে চিকিত্‌সা হলে ডায়াবিটিস নিয়ন্ত্রণে রাখাও অসম্ভব কিছু নয়।

সমস্যা ও সমাধান

১৮ থেকে ৩০ বছর বয়সীদের মধ্যে ডায়াবিটিসের প্রবণতা ক্রমেই বাড়ছে। জীবনযাত্রায় পরিবর্তন এর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কারণ। দিনের পর দিন ফাস্ট ফুড খাওয়ার ফলে ওবিসিটির সমস্যা দেখা দিচ্ছে অনেক কম বয়স থেকেই। তরুণ প্রজন্মের মধ্যে সেন্ট্রাল ওবিসিটি ডায়াবিটিসের বড় কারণ। স্কুলে পড়ার সময় থেকেই বাড়ির খাবারের বদলে বাইরের হাই ক্যালরিযুক্ত খাবার খাওয়া ও এক্সারসাইজ়বিহীন জীবনযাপন করার প্রবণতা বেড়ে যাচ্ছে এখনকার ছেলেমেয়েদের মধ্যে। কর্পোরেট সংস্থায় চাকরি করলে রাতে দেরি করে বাড়ি ফেরা, গাড়িতে যাতায়াত করা, অনিয়মিত খাওয়াদাওয়া ও একজায়গায় বসে বসে কাজ করাটা খুব স্বাভাবিক। এঁরা সেডেন্টারি লাইফস্টাইলের শিকার। স্ট্রেস বেড়ে যাওয়ার ফলেও ওজন বাড়ছে। এটিও পরোক্ষভাবে ডায়াবিটিসের জন্য দায়ী। অ্যাবডমিনাল ফ্যাট বেড়ে গেলে অগ্ন্যাশয়তে ফ্যাট জমে যায়। এর ফলে ইনসুলিন নিঃসরণ ক্ষমতা কমে যায়। নিঃসৃত ইনসুলিন সঠিকভাবে কাজ করতে পারে না। ইনসুলিন রেজ়িস্ট্যান্স বেড়ে যায়। এরফলে কম বয়সেই টাইপ টু ডায়াবিটিস দেখা যায়। অনেকের ধারণা, এদের মধ্যে টাইপ ওয়ান ডায়াবিটিস দেখা যায়। কিন্তু এ ধারণা সঠিক নয়। কমবয়সীদের মধ্যে সবসময় ডায়াবিটিসের ক্লাসিকাল সিম্পটম দেখা যাবেই, এমন কোনও নিশ্চয়তা নেই। ঘন ঘন টয়লেট যাওয়া, জল তেষ্টা পাওয়া, রোগা হয়ে যাওয়া, দুর্বলবোধ করা ইত্যাদি লক্ষণ সবসময় নাও থাকতে পারে। অনেকক্ষেত্রে কোনও উপসর্গ ছাড়াই রক্তপরীক্ষা করলে বোঝা যায় যে এঁদের শুগারের মাত্রা খুব বেশি! তবে ক্লান্তবোধ করা, চোখে ঝাপসা দেখা, ওজন দ্রুত কমে যাওয়া ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ ডায়াবিটিসের। যাঁদের পরিবারে ডায়াবিটিসের ইতিহাস আছে, তাঁদের তো আরওই সতর্ক হতে হবে। অনেকের আবার কম বয়সেই কোলেস্টেরল ও রক্তচাপের মাত্রা বেশি থাকে। এঁরাও রিস্ক জ়োনে আছেন। বলাই বাহুল্য, এগুলোর পিছনেও অত্যধিক ওজন দায়ী। কম বয়সে অনেক মহিলারই জেস্টেশনাল ডায়াবিটিস (প্রেগনেন্সির সময়ে ডায়াবিটিস) হয়। এঁদের অনেকেরই পরিবারে কোনও ডায়াবিটিসের ইতিহাস নেই। অধিকাংশক্ষেত্রে দেখা যায়, এঁরা পরবর্তীকালে ডায়াবিটিক হয়ে যান।

চিকিত্‌সার মধ্যে প্রথমেই জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আনতে হবে। কমবয়সীদের ক্ষেত্রে ডায়েট চার্ট মেনে চলা অতটা সম্ভব নয়। তবে ডায়েটে ছোটখাটো কিছু পরিবর্তন করা যেতে পারে। এঁরা অনেকেই তাড়াহুড়োতে ব্রেকফাস্ট ঠিকমতো করেন না। সুষম ব্রেকফাস্ট করা প্রয়োজন। ফাস্টফুড দিয়ে লাঞ্চ করবেন না। আর ছোট ছোট মিল, অন্তত চার-পাঁচবার খাওয়া প্রয়োজন। ভাত, রুটি নিয়ন্ত্রিতভাবে খেতে পারেন। এরসঙ্গে এক্সারসাইজ় করা দরকার। অফিসে লিফট ব্যবহার না করে সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা করুন। দিনে অন্তত ৪৫ মিনিট হালকা এক্সারসাইজ় করুন। মোটামুটি ওষুধ আর সঠিক জীবনযাপনেই ডায়াবিটিস নিয়ন্ত্রণে থাকবে। নাহলে কিছু ক্ষেত্রে ইনসুলিন দিতে হতে পারে। ব্লাড শুগারের মাত্রা খুব বেশি হলে দু’-তিনমাসের জন্য ইনসুলিন নিতে হতে পারে। কম বয়সে ডায়াবিটিসের সমস্যা হল, এর চিকিত্‌সা করতে হবে দীর্ঘদিন ধরে। হার্ট, কিডনি, চোখ ও নার্ভ ডায়াবিটিসে আক্রান্ত হয় সবচেয়ে বেশি। তাই, আগে থেকে নিয়মিত চিকিত্‌সা করানো প্রয়োজন। ব্লাড শুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখলে জটিলতা হওয়ার কথা নয়। এছাড়া ব্লাডপ্রেশার ও কোলেস্টেরলের মাত্রাও নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। লাইফস্টাইল মডিফিকেশনের সঙ্গে মেটফরমিন গ্রুপের ওষুধ দেওয়া হয়। এর বিশেষ কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। তবে একবার ডায়াবিটিস হলে পুরোপুরি সেরে ওঠার সম্ভাবনা কম। যাঁদের ডায়াবিটিস আছে বাড়িতে তাঁরা অবশ্যই গ্লুকোমিটার রাখবেন। নিয়মিত চেক-আপ করানো খুব দরকার। চোখ, পা ও নার্ভের চেক-আপ করানোও দরকার।

No comments

Powered by Blogger.