বাচ্চা ঘুমতে চায় না ঘুমের কথা বললেই নানা অজুহাত।
বাচ্চা ঘুমতে চায় না |
ঘুমের কথা বললেই নানা অজুহাত। জোর করে শোওয়ালেও সারারাত ছটফটানি। বাচ্চার শরীর তো খারাপ হয়ই, সঙ্গে বাবা-মায়েরও হয়রানি।
আপনার আদরের মেয়ে এমনিতে বেশ শান্তশিষ্ট। খাওয়াদাওয়া, পড়াশোনা নিয়ে কোনও সমস্যা নেই। কিন্তু ঘুমের কথা বললেই ঠোঁট উলটে যায়। কিছুতেই মেয়েকে সময়ে ঘুম পাড়াতে পারেন না। যদি বা কোনওভাবে শোওয়ানো গেল, তো খানিকক্ষণ পরেই আবার উঠে পড়ে। আপনাদেরও তুলে দেয়। কখনও বাথরুম যাওয়ার বায়না, তো কখনও জল তেষ্টা পাওয়ার অজুহাত। আর সারাদিনের ধকলের পর প্রতিদিনের এই নিত্য ঝামেলায় আপনাদের অবস্থাও বেশ শোচনীয়। আবার কোনও কোনও বাচ্চা আছে যারা হয়তো সময়ে শুতে যায়। কিন্তু বিছানায় শুয়ে সারারাত ছটফট করে। খালি এপাশ-ওপাশ করে, না হলে সারারাত ভুল বকতে থাকে।
অনেকের মনে হতে পারে, বাচ্চাদের আবার ঘুমতে অসুবিধে কীসের! বড়দের না হয় নানা রকম টেনশন, দুশ্চিন্তা থাকে, তাই তাঁদের ঘুমে ব্যাঘাত হতেই পারে। কিন্তু বাচ্চাদের তো আর সংসার, অফিস, ছেলেমেয়ে নিয়ে চিন্তা করতে হয় না, তাই তাদের এই আচরণ অবাধ্যতা ছাড়া আর কিছুই নয়। আসলে আমরা ভুলে যাই যে বাচ্চারাও বড়দের মতো সম্পূর্ণ মানুষ। তাদের ইচ্ছা-অনিচ্ছা, পছন্দ-অপছন্দ, রাগ, দুঃখ, অভিমান সবই হয়। বড়দের মতো তারা হয়তো সব সময় মুখ ফুটে প্রকাশ করতে পারে না। আর এই চাপা অনুভূতিগুলো তাদের মাথার মধ্যে ঘুরপাক খেতে থাকে। এই অস্থিরতা তাদের ঘুমে অসুবিধের সৃষ্টি করে। এই ‘ইমোশনাল ডিসকমফর্ট’ থেকে বেরিয়ে আসার জন্য তারা নানা রকম আচরণ করতে থাকে। বিছানা থেকে নেমে পড়ে, জল খেতে চায়, বাথরুম পেয়েছে, এইসব অজুহাত দেয়। অথবা ঘুম পায়নি, বা তাদের আজকে বেশিক্ষণ খেলতে দেওয়া হয়নি এই জাতীয় নালিশ করে। যখন কোনও কিছুতেই বাবা-মায়ের মনোযোগ আকর্ষণ করতে পারে না, তখন কান্নাকাটি শুরু করে দেয়। রোজকার এই মানসিক দ্বন্দ্ব বাচ্চার নিজের শরীরের পক্ষে ক্ষতিকারক তো বটেই, সেই সঙ্গে বাবা-মায়ের কাছেও মাথাব্যথার বড় কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
কী করবেন ?
প্রত্যেক দিন বাচ্চাকে নিয়ে একই সময়ে ঘুমতে যান। একমাত্র উইকএন্ড ছাড়া এই রুটিনের হেরফের করবেন না। বাচ্চা যদি আলাদা শোয়, তা হলে বাচ্চা যতক্ষণ না ঘুমিয়ে পড়ছে, ততক্ষণ ওর পাশে বসে থাকুন। যদি মনে হয় বাচ্চা একা ঘুমতে ভয় পাচ্ছে বা এতে ওর অ্যাংজ়াইটি হচ্ছে, তা হলে বাচ্চাকে সঙ্গে নিয়েই শুতে যান। এতে হয়তো আপনাদের একান্ত ব্যক্তিগত মুহূর্ত কিছুটা নষ্ট হবে। কিন্তু বাচ্চার স্বার্থে এইটুকু সমঝোতা করতে ক্ষতি কী!
ঘুমের সময়ের অন্তত ৪৫ মিনিট আগে বাচ্চাকে জানিয়ে দিন যে ঠিক ক’টায় ওকে ঘুমতে যেতে হবে। এতে ও খানিকটা মানসিক প্রস্তুতি নিয়ে নিতে পারবে। বাচ্চাকে পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিন যে নির্ধারিত সময়ের পর ওকে আর খেলতে বা টিভি দেখতে দেওয়া হবে না। তাই ও যেন ওর সব খেলনা বা বইখাতা এই সময়ের মধ্যেই গুছিয়ে নেয়। এরপর আপনি আর কোনওরকম অজুহাত শুনবেন না।
ঘুমতে যাওয়াটাকে একটা প্রসেস মনে করুন। ধাপে ধাপে বাচ্চাকে ঘুমতে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত করুন। ওর জামাকাপড় বদলে দিন, ব্রাশ করতে সাহায্য করুন, ছোট্ট কোনও গল্প বলুন, যাতে ও এই পুরো প্রসেসটার সঙ্গে অভ্যস্ত হয়ে যায়। ঘুমতে যাওয়ার আগে টুকটাক কথাও বলতে পারেন। ওর পুরো দিনটা কেমন কেটেছে, গোটা দিনে সবথেকে ভাল কী হয়েছে আর সবথেকে খারাপ কী হয়েছে জেনে নিন। এতে শুধুমাত্র ওর মনের অস্থিরতা জানতে পারবেন না, আপনার সঙ্গে ওর সম্পর্কও আরও দৃঢ় হবে।
ঘুমতে যাওয়ার আগে ওকে আরও ১০-১৫ মিনিট সময় দিতে পারেন, কোনও বইয়ের পাতা উলটে দেখার জন্য। কিন্তু একেবারে স্পষ্ট করে বলে দিন যে এটা ওর ‘কোয়ায়েট টাইম’। এই সময়ে যেন ও বিছানাতেই থাকে আর কোনও হুটোপাটি না করে। ও যদি বিছানা থেকে নেমে ঘরের বাইরে বেরিয়ে যায়, তা হলে আবার ওকে কোলে তুলে বিছানায় শুইয়ে দিন। যতবার ও বিছানা থেকে নেমে যাবে ততবার ওকে জোর করে শুইয়ে দিন। এতে হয়তো ও কান্নাকাটি করবে কিন্তু আপনি একদম দৃঢ় থাকুন, কোনওভাবেই দুর্বল হয়ে পড়বেন না। তবে রাগ করবেন না বা বিরক্তি দেখাবেন না। একসময় ও নিজেই হাঁপিয়ে যাবে, আর জেদ করবে না।
অনেক সময় বাচ্চারা বাবা-মায়ের সঙ্গে বেশি সময় কাটাবার সুযোগ পায় না। আর তাই মনোযোগ আকর্ষণ করার জন্য এই ধরনের ব্যবহার করে। যদি বুঝতে পারেন যে বাচ্চা একাকীত্বে ভুগছে, তা হলে বাচ্চার সঙ্গে আরও বেশি সময় কাটাবার চেষ্টা করুন। উইকএন্ডে বাচ্চাকে নিয়ে কোথাও ঘুরে আসুন। আপনার সঙ্গে যথেষ্ট সময় কাটাতে পারলে হয়তো বাচ্চার ব্যবহারে পরিবর্তন আসতে পারে।
যদি দেখেন বেশ কয়েক সপ্তাহের পরও বাচ্চা এই রুটিনে অভ্যস্ত হতে পারছে না, তা হলে কোনও ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলে দেখতে পারেন। অনেক সময় শারীরিক কোনও অসুবিধে থাকলে বাচ্চার ঘুমে ব্যাঘাত ঘটতে পারে। সেক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ একান্ত জরুরি।
No comments